শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন
কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: সাদা মনের মানুষ হিসেবে সর্বমহলের আস্থা অর্জন করেছিলেন সৈয়দ আহমুদুল হক। সালিশ বৈঠকের ন্যায় বিচারক হিসেবেও তাঁর রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। বিশেষ করে এলাকাসহ সম্পূর্ণ জেলার হাজার হাজার মানুষ তাঁকে ‘পইলের সাব’ হিসেবেই চিনেন। প্রচুর জনপ্রিয়তার কারণে দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িদ্ব পালন করে আসছেন তিনি। ১৯৮৫ সালে প্রথম সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর টানা ৫ বার উপজেলা নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে আসছেন।
কিন্তু ক্ষমতা কারও দীর্ঘ স্থায়ী নয় তার প্রমাণ মিলেছে রোববার (১০ মার্চ) সদর উপজেলা নির্বাচনে। আনারস প্রতিকের প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাচ্ছিরুল ইসলামের কাছে পরাজিত হয়েছেন তিনি। তাও আবার প্রায় ৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে। ফলে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে স্বযতনে আগলে রাখা সদর উপজেলা পরিষদের সিংহাসন ছাড়তে হলো জনপ্রিয় এই নেতাকে।
সর্ব মহলে ন্যায়ের প্রতিক সৈয়দ আহমুদুল হক ১৯৪৯ সালের ৩১ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের সাহেব বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সৈয়দ জাহেদুল হক (ময়না মিয়া) সাহেব ছিলেন পইল ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আহমদুল হক ১৯৬৮ সালে বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে বি.কম ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কয়েক বছর পইল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে সমবায় অফিসে পরিদর্শক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। একপর্যায়ে জনগণের চাওয়ার মূল্যায়ন করতে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে পইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। দীর্ঘ সময় তিনি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে প্রথম সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে ২য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদেও বিপুল ভোটে পরাজিত করেন।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলা পরিষদ বিলুপ্তির পর পইল ইউনিয়নবাসীর দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় আবারও ৪নং পইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ এবং ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে আবারও অত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ৩য় বারের মতো হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. মোতাচ্ছিরুল ইসলামকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে চতুর্থবারের মতো হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সৈয়দ আহমদুল হক।
কিন্তু রোববার (১০ মার্চ) হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করলেন টানা চারবারের নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক। ৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হারানো প্রার্থী মোতাচ্ছিরুল ইসলামের কাছে প্রায় ৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
তবে এ ব্যাপারে হতাশ নন বলে জানিয়েছেন তিনি। সৈয়দ আহমুদুল হক বলেন- ‘নির্বাচনে জয় পরাজয় আছে। দীর্ঘদিন জনগণ আমার উপর আস্থা রেখে আমাকে বিজয়ি করেছেন। আমি চেষ্টা করেছি জনগণের আস্থার মূল্যায়ন করতে। এখন আমার বয়স হয়েছে। তাই হয়তো জনগণ নতুন একজনকে বেচে নিয়েছেন।’
তিনি বলেন- ‘আমি জনগণের হৃদয়ে আছি, থাকব। কারণ জনগণের ভালোবাসার ঋণ আমি জীবন দিয়েও শোধ করতে পারব না।’